প্রথম লেখা

আমি যখন ছোট ছিলাম, স্কুলেও ভর্তি হই নাই, তখন থেকেই আমার বই পড়ার প্রতি খুব আগ্রহ ছিলো। কিন্তু পড়তে তো পারতাম না। তাহলে উপায়? একটাই উপায় ছিলো, আমার বড় আপু’র কাছে অনুরোধ করা যাতে ও আমাকে বই পড়ে শোনায়। ওই ছোট্ট আমার কাছে বই পড়া বলতে আসলে কমিকস পড়া। তো বড় আপু আমাকে চাচা চৌধুরী’র কমিকস পড়ে শোনাত। কিন্তু আমি প্রতিদিন একটাই কমিকস আপু’র কাছে শুনতে চাইতাম। তো আপু যখন পড়তো, তখন আমি শুনতাম আর ছবি গুলার দিকে তাকিয়ে থাকতাম। আর লেখা গুলাও মাঝে মাঝে দেখতাম, কিন্তু কিছু বুঝতাম না। হিজিবিজি হিজিবিজি লাগতো। তো, এইরকমই কোন একদিন বড় আপু’র কাছে আমি বই শুনতে চাইলে দেখা গেলো আপু’র অন্য পড়া আছে, তাই আমাকে বই পড়ে শোনাতে পারছে না। তখন বড় আপু’র মনে একটা বুদ্ধি খেলে গেলো! আমি তো একই গল্পই প্রতিদিন শুনতে চাই! ব্যস! বড় আপু করলো কি, একটা ক্যাসেট এ পুরো গল্পটাই রেকর্ড করে দিলো! তখন তো আর এখনকার মতো কম্পিউটার, মোবাইল বা এমপিথ্রি ছিলো না, তাই ক্যাসেট প্লেয়ারই ছিলো একমাত্র ভরসা!

তো বড় আপু গল্পের প্রতিটা লাইন খুব ইমোশন দিয়ে রেকর্ড করলো। এখনও কানে বাজে – “রঘু, ও রঘু! কই গেলি? “

তো এইভাবেই বড় আপু রেকর্ড করে দেওয়ার পর আমার জন্য কাজটা খুব সহজ হয়ে গেলো। আমার যখন বই শুনতে ইচ্ছা করতো, আম্মুকে বললে আম্মু ক্যাসেট প্লেয়ার চালায় দিতো, আর আমি বই হাতে নিয়ে শুনতে থাকতাম, আর ছবি আর হিজিবিজি গুলা দেখতে থাকতাম। আর এইভাবে দেখতে দেখতেই হিজিবিজি গুলা কে কিছুটা বোধগম্য মনে হতে লাগলো।

এইভাবে বেশ কিছুদিন যাওয়ার পর একদিন দেখি আমার আব্বু বসে পেপার পড়ছে। আমি কৌতুহল নিয়ে পেপার এর দিকে তাকিয়ে দেখি অনেক কিছুই তো চেনা! সেই বই এর হিজিবিজি গুলাই এইখানেও দেখা যাচ্ছে! আর আমি দেখে দেখে একটু খানি পড়েও ফেললাম! আব্বু তো পুরা অবাক! এই ছেলে তো স্কুলেও পড়ে না, কেউ কোনদিন ক খ, অ আ কিছুই পড়ায় নাই! তাহলে এ পেপার কিভাবে পড়ছে? তারপর বড় আপুও এসে আমাকে বললো আরও কিছু পড়ে দেখাতে, আমি হুবহু পড়ে শুনালাম! কিন্তু কোন বর্ণ কে কি বলে, সেইটা বলতে পারলাম না!

এভাবেই শুরু হয়েছিলো আমার শিক্ষাজীবন! এবং খুব ভালো মতই সব ক্লাশ শেষ করে ফেলছিলাম। কিন্তু বিধিবাম! ক্লাশ এইট এ যেয়ে আমাকে শেষমেষ ক থেকে ম পর্যন্ত শিখতে হয়েছিলো, ক বর্গীয় – প বর্গীয় এইসব পড়ার জন্য! আমি বুঝতাম না কোন “স” কে কি বলে! শুধু জানতাম “স” দিয়ে সাজিদ লিখতে হয়, “শ” দিয়ে শাবানা (আমার মা এর নাম) লিখতে হয়, আর “ষ” দিয়ে ষাড় লিখতে হয়! তো আমি সব সময় বলতাম, কোন শ? আম্মু’র শ? নাকি আমার স?

অনেকদিন পর জাফর ইকবাল স্যার এর একটা গল্পের বই পড়ার সময় জানতে পা জাফর ইকবাল স্যার এর ছেলেরও ঠিক এইরকম একটা কাহিনি ছিলো! বাচ্চাদের সাথে খেলার সময় সেও বলে একটা পাজেল সব করে ফেলেছিলো, যদিও সে কখনো বর্ণ শিখে নাই। যখন জিজ্ঞাস করা হয় এতো কঠিন পাজেল কিভাবে সল্ভ করেছিলো, জাফর ইকবার স্যার এর ছেলের উত্তর ছিলোঃ “আমি পাজেল এর ইন্সট্রাকশন ফলো করেছিলাম”। কিন্তু এই পিচ্ছি তো পড়া শিখে নাই, কিভাবে সল্ভ করলো? আমি যেভাবে শিখেছিলাম, হয়তো ওইভাবেই!

কিন্তু আমি জাফর ইকবাল স্যার এর বইটার নাম আর মনেই করতে পারি নাই, আপনাদের কারও জানা থাকলে প্লিজ জানাবেন, আমি এই লেখার সাথে সংযুক্ত করে দিবো।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top