Happy Birthday!

অন্যদিনের মতোই আজকের সকালটাও সুন্দর। জানালা দিয়ে রোদ এসে ঢুকছে, সেই ঝলমলে রোদ চোখে লাগার সাথে সাথে সাজিদের ঘুম ভেংগে গেলো। যদিও সকালটা অনেক সুন্দর, পাখি ডাকছে বাহিরে, কিন্তু সাজিদের খুব বিরক্ত লাগলো! কারন সাজিদ খুব সুন্দর একটা স্বপ্ন দেখছিলো। কিন্তু ঘুম ভাঙ্গার পর সাজিদ কিছুতেই মনে করতে পারলো না স্বপ্নটা কি নিয়ে ছিলো!

যাই হোক, উঠেই সাজিদ নিজের মোবাইলটা খুজতে লাগলো। কিন্তু অনেক খুঁজেও কোথাও পেল না! ব্যাপারটা কি? রাতে তো পাশে নিয়েই ঘুম দিয়েছিলো? হুট করে সাজিদের চোখ গেলো দেওয়ালে ঝুলানো ক্যানেন্ডারটার দিকে। ২৪শে ডিসেম্বর, ২০০০ সাল! সাজিদ কিছুক্ষন চোখ কচলিয়ে আবারো দেখলো, নাহ! ঠিকি তো দেখছে! এতো ২০০০ সাল! কিন্তু তারিখটাও তো ঠিকই আছে! ২৪শে ডিসেম্বর, সাজিদের জন্মদিন! তবে কি সাজিদ স্বপ্ন দেখছে? নিজেকে চিমটি মেরে দেখলো একবার, নাহ, স্বপ্ন না, সত্যিই তো! নিজের চিমটি খেয়ে উহ করে উঠলো সাজিদ!

এই ঘোর থেকে বের হওয়ার জন্য সাজিদ ঠিক করলো ও নাঈম এর বাসায় যাবে। নাঈম এর সাথে ব্যাপারটা নিয়ে একটু আলোচনা করা দরকার! তাড়াতাড়ি নাশতা খেয়ে সাজিদ বের হয়ে গেলো নাঈম এর বাসার উদ্দেশ্যে। একটা রিকশা নিয়ে সোজা চলে গেলো নাঈম এর বাসায়, লালমাটিয়াতে।

নাঈম এর বাসায় পৌঁছে কলিংবেল দিতেই নাঈম এর মা দরজা খুললো। জিজ্ঞাস করলাম, নাঈম আছে কিনা? ওর মা বললো, নাহ, নাঈম তো আরও আধা ঘন্টা আগেই বের হয়ে গেছে! কোথায় গেছে, বলতে পারে না! সাজিদের তো পুরা মাথায় হাত! এমনিতে ২০০০ সাল, না আছে ফেসবুক, না আছে মোবাইল, এখন কিভাবে নাঈম কে খুঁজবে? তারপর ঠিক করলো নাঈম যেহেতু বলে যাই নাই কোথায় গেছে, হয়তো ধারেকাছেই কোথাও গেছে। তাই ওর বাসার সামনেই অপেক্ষা করতে থাকলো। পাক্কা আধা ঘন্টা পরে নাঈম আসলো, এসেই সাজিদকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানালো! তারপর ২ বন্ধু মিলে ঠিক করলো আজকে লাঞ্চটা একসাথেই করবে।

তারপর ২ বন্ধু মিলে চলে গেলো ধানমন্ডি জিগাতলা’র লায়লাতিতে। ওইখানের খাবার অনেক মজা, আগেও ওইখানে বেশ কয়েকবার গেছে সাজিদরা। কিন্তু ওইখানে পৌঁছানোর পর থেকেই নাঈম একটু উসখুশ করতে থাকলো, মনে হলো কারো জন্য অপেক্ষা করছে। একটু পরেই দেখা গেলো আন্দালিব, জনি আর তপু হাশি মুখে লায়লাতিতে ঢুকছে! ওদের কারো হাতে বই, কারো হাতে কেক, কারো হাতে প্যাকেট করা গিফট! সাজিদের তো আর খুশি ধরে না! এ তো বিশাল সারপ্রাইজ! তারপর সবাই মিলে কেক কাটলো, খাবার খেলো, তারপর ধানমন্ডি লেকে বাকি দিনটা কাটিয়ে দিলো।

এইবার সাজিদের ট্রিট দেওয়ার পালা। বিকালে আবার সবাই মিলে চলে গেলো মুস্তাকিমের চাপ খেতে। দুপুরের সব বন্ধুরাও গেলো, সাথে আরও কিছু বন্ধু যোগ দিলো বিকালের পার্টিতে। সাজিদ বার বার করে আন্দালিব কে বলে দিলো লুচি একটু কম খেতে, কিন্তু কে মনে রাখে কার কথা? আন্দালিবই সব থেকে বেশি লুচি খেয়ে বিশাল বিল তুলে ফেললো!!

তারপর সবার থেকে বিদায় নিয়ে বাসায় যেয়ে দেখলো সেখানেও হুলস্থুল কান্ড। সাজিদের মা অনেক কিছু রেঁধেছে, আর সাজিদের এলাকার অনেক বন্ধুও এসেছে! সবার হাতে গিফট! সাজিদের তো খুশি আর ধরে না! এত কিছু এক সাথে! এ যেন ঈদ! তারপর সারাদিনের ধকল শেষে সাজিদ বিছানায় শুয়ে খুশি মনে সব চিন্তা করতে করতে ঘুমিয়ে পরলো!!

পরদিন সকালে ঘুম ভাংলো একটু দেরী করে। ফোনের এলার্ম শুনে! হুরমুড় করে উঠে সাজিদের মেজাজটাই খারাপ হয়ে গেলো! উফফ! এই এলার্ম বাজার আর সময় পেলো না? উঠে মোবাইল এর এলার্ম বন্ধ করতেই সাজিদের হঠাত মনে পড়লো গতকালের কথা। কিন্তু একি? টেবিলের উপর যে এত এত গিফট রেখে ঘুমালো, ওই গুলা গেল কই? এত বই? এত গিফট? হুট করে সাজিদের চোখ গেলো দেওয়ালে, কই, কোন ক্যালেন্ডারও তো নেই? মোবাইল টা হাতে নিয়ে সাজিদ দেখলো, তারিখ লেখা ২৪শে ডিসেম্বর, ২০২০! তাহলে কি এতোক্ষন সাজিদ স্বপ্ন দেখছিলো? আগের দিনটাই স্বপ্ন ছিলো?

এইগুলা ভাবতে ভাবতে সাজিদ নিজের ফোন হাতে তুলে দেখলো, প্রায় ২০০ নোটিফিকেশন তার ফোন এ! খুলে দেখে, একের পর এক জন্মদিনের শুভেচ্ছা! সাজিদের মনটা কেন জানি খুব খারাপ হয়ে গেলো! অথছ এত এত উইশ দেখে কিন্তু মন ভালো হওয়ারই কথা ছিলো! তারপরেও ভাবলো একবার মেসেজ গুলা চেক করেই দেখা যাক, সাজিদ অবাক হয়ে লক্ষ্য করলো বেশিরভাগ মেসেজই হচ্ছে HBD লেখা! কেউ কেউ অবশ্য ওইটাও লেখেনি, শুধু একটা করে কেক এর স্মাইলি দিয়ে রেখে দিয়েছে! আবার কেউ কেউ একটা gif পাঠিয়েছে! একটা সাদা রঙের বস্তু, মাথা নাড়াচ্ছে, আর তার দুই কানের মাঝে মোমবাতি জ্বলে উঠে হ্যাপি বার্থডে লেখা উঠছে!

এক নাগাড়ে এইগুলা দেখতে দেখতে সাজিদ বিরক্ত হয়ে ফোনটা রেখে নাস্তা খাওয়ার দিকে মনোযোগ দিলো।

এইবার নাশতা শেষ করে সাজিদ নাঈম কে ফোন দিলো। রিং হচ্ছে, কিন্তু অপর পাশ থেকে কেউ ধরছে না। বেশ কয়েকবার ফোন দিয়ে হাল ছেড়ে দিয়ে এইবার ফোন দিলো আন্দালিব কে। ওর ফোন ওয়েটিং এ আছে। এইবার ঠিক করলো জনিকেই না হয়ে একটা ফোন দিবে! দান দান তিন দান! জনি ফোন ধরলো। ধরেই বলে উঠলো, চৌধুরী, জন্মদিনে কি আর দেবো তোমায় উপহার? বাংলায় নাও ভালোবাসা, হিন্দীতে নাও পেয়ার! এইবার সাজিদের মনটা শেষমেষ একটু ভালো হলো! তারপর জনি’র সাথে কথা বলতে বলতে এর মধ্যে দেখলো আন্দালিবও ফোন দিচ্ছে, তারপর আন্দালিব এর সাথেও কথা বললো। কিন্তু সবাই উইশ করেই ঐ পর্যন্তই শেষ! কেউ আর দেখাও করতে চাইলো ন! শেষমেষ সাজিদ নিজেই বললো, চল, আজকে তোদের কে সুলতান’স ডাইন এ খাওয়াবো! সবাই তো শুনে মহা খুশি!

যে কথা, সেই কাজ! সবাই মিলে চলে গেলো! সে এক হুলস্থুল কান্ড। ১ ঘন্টা নিচে দাঁড়িয়ে থেকে শেষমেষ যায়গা পাওয়া গেলো! খাবার আসার সাথে সাথেই শুরু হয়ে গেলো খাবারের ছবি তোলা! আর সাথে সাথে সেইছবি ফেসবুক আর ইন্সটগ্রাম এ পোস্ট করা! সাজিদের খুব মন খারাপ হয়ে গেল। গতকালের স্বপ্নের কথা মনে পড়ে গেলো! আহা, কি সুন্দরই না ছিলো স্বপ্নটা!

তারপর খাওয়া শেষ করে সবাই মোবাইলের নোটিফিকেশন চেক করতে করতে যে যার মতো বিদায় নিয়ে চলে গেলো। থাকলো শুধু নাঈম। নাঈম কে সাজিদ আগেরদিনের স্বপ্নটা বলতে গিয়েও বললো না। উদাস হয়ে থাকলো।

তারপর বাসায় যেয়ে দেখলো আজকে কোন কিছু রান্না হয় নাই। কারন ফুডপান্ডা থেকেই খাবার অর্ডার করা হয়েছে! সবাই মিলে সেই খাবার খেয়ে, ছবি তুলে, যে যার মতো চেকইন দিয়ে ঘুমিয়ে পরলো। একমাত্র সাজিদ জেগে থাকলো, আর চিন্তা করতে থাকলো, আগে কি সুন্দর দিন কাটাইতাম!

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top