আগের লেখায় বলেছিলাম আমি কিভাবে অ আ ক খ না শিখেই পড়া শুরু করেছিলাম। আজকের লেখাটা তার পরের কাহিনী নিয়ে। আমার ২ বোন লালমাটিয়া গার্লস স্কুলে পড়তো। বড় বোন ক্লাস ৭ এ, আর মেজো বোন ক্লাস ৩ তে। এইরকম একটা সময় ঠিক হলো আমাকে ক্লাস ১ এ ওদের স্কুল এই ভর্তি করানো হবে! আমিও গুটি গুটি পায়ে স্কুলে ভর্তি হয়ে গেলাম। ওই স্কুলে শুধু ক্লাশ ১ই কো-এড ছিলো। ওইখানে আমার ফ্রেন্ড হইলো শরীফ নামের একজন। সে আবার ওই স্কুলেরই কোন এক টিচার এর ছেলে ছিলো।
ভর্তি হওয়ার পর আমি তো মহা খুশি! পড়াশোনা করতে পারছি শেষমেষ! সব সাবজেক্টেই খুব ভালো করলেও আমার সব থেকে খারাপ অবস্থা হয়ে গেলো ড্রয়িং ক্লাশ গুলাতে! ছবি আঁকাটা খুব একটা হচ্ছিলো না আমাকে দিয়ে! আম্মু আমাকে অনেক কষ্ট করে ছবি আঁকানো প্র্যাক্টিস করাতো, কিন্তু কোনমতেই কিছু হচ্ছিলো না! পেঁপে আঁকতে দিলে দেখা যায় একদিক ঠিক আঁকি তো আরেকদিক বেঁকে যায়! এই ভাবেই চলতে থাকে আমার স্কুল জীবন! অঙ্ক শুরু থেকেই আমার খুব প্রিয়। কিন্তু ড্রয়িং টা কোনভাবেই হচ্ছিলো না!
তো দেখতে দেখতে আমার প্রথম সাময়িক পরীক্ষা’র ফলাফল বের হলো। সবাইকে অবাক করে দিয়ে আমি ওই পরিক্ষায় প্রথম স্থান অর্জন করে নেই! কিন্তু তারপরেও রেসাল্ট এর দিন আমার মা কে ডেকে পাঠায় টিচার!
আম্মুও কিছুটা অবাক। রেজাল্ট ভালো করার পরেও কেন ডেকে পাঠানো হলো? কিছুক্ষন পরেই বুঝা গেলো কেন ডাকা হয়েছে!
টিচার আমার ড্রয়িং খাতা দেখানোর জন্যই ডেকেছে! আম্মু তো আমার ড্রয়িং খাতা দেখে চক্ষুছানাবড়া! আসলে হয়েছিলো কি, খাতার প্রথম পেইযে লেখা ছিলোঃ “এইখান থেকে লেখা শুরু করতে হবে”। আর তার নিচে অল্প কিছু জায়গা ছিলো। আমি এই অল্প যায়গাতেই ৫-৫টা ছবি এঁকে ফেলেছিলাম! সব থেকে ইন্টারেস্টিং ছিলো আমার আম আঁকাটা! একটা বাংলা ৫ লিখে সেইটাকে খুব সুন্দর করে রঙও করেছিলাম! সাইজ এর কথা আর না-ই বললাম!
এ ছাড়াও একটা গ্লাস, একটা বাড়ী, একটা ঘুড়ি আর আরেকটা মনে পরছে না এখন! সব মিলিয়ে এই ৫টা ছবি এঁকে কোন মতে পাস করেছিলাম ড্রয়িং এ। কিন্তু অন্য সাব্জেক্ট গুলাতে এতই বেশী নম্বর ছিলো যে সব মিলিয়ে আমার প্রথম হওয়া কেউ “থামাতে পারে নাহই”।